একটি ছোট শিশু একদিন বড় হয়। প্রথমে সে কিশোর, তারপর যৌবনে পা দেয়। ধীরে ধীরে সে বুঝতে শেখে, সমাজে কীভাবে চলতে হবে।
পরিবার তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। সেও নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে, যেন তার প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটে। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে, তবু দিনের শেষে সে কী পায়? অনেক পুরুষের ভাগ্যে জোটে শুধু অবহেলা। যেন সে পরিবারের জন্য কেবল টাকার মেশিন! ভালোবাসার জায়গায় যেন শুধুই চাহিদা আর দায়িত্বের চাপ।
চলুন বাস্তবতার কিছু কষ্টদায়ক উদাহরণ দেখি—
প্রবাসী কর্মী:
পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়তে হাজার মাইল দূরে কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু দিনশেষে পরিবারের কাছে তার একটাই পরিচয়—সে শুধু টাকা পাঠানোর লোক! তার কষ্ট, তার একাকীত্ব কেউ বোঝে না।
দিনমজুর:
জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য সে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যায়। হোটেলে থাকার টাকা বাঁচিয়ে স্টেশনে রাত কাটায়, তবু একটাই লক্ষ্য—পরিবার যেন ভালো থাকে।
চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক:
যে-ই পেশায় থাকুক না কেন, একজন পুরুষ কঠোর পরিশ্রম করে কেবল পরিবারের সুখের জন্য। কিন্তু পরিবার থেকে প্রায়ই বলা হয়—
“এত কম টাকায় সংসার চলে? আরও বেশি ইনকাম করো!”
অতিরিক্ত মানসিক ও শারীরিক চাপ নিতে নিতে অনেকে হিটস্ট্রোকে প্রাণ হারায়, কিন্তু তখনও কেউ ভাবে না—সে একজন মানুষ, তারও তো যত্ন পাওয়ার অধিকার আছে!
ঈদের দিনের বাস্তব চিত্র—
একজন বাবা তার সন্তানদের নতুন জামা কিনে না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি পান না। স্ত্রীকে নতুন পোশাক কিনে দেন। কিন্তু যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,
“চাচা, নিজের জন্য ঈদের বাজেট কত?”
সে হাসিমুখে উত্তর দেয়,
“নিজের জন্য কিছু না, বাবা। আমার পরিবার খুশি থাকলেই হলো!”
পুরোনো ছেঁড়া স্যান্ডেল পরে কেউ যখন বলে,
“নতুন স্যান্ডেল কিনবেন না?”
সে হেসে বলে,
“মুচির কাছে সেলাই করিয়ে নেব, একদম নতুন হয়ে যাবে!”
এটাই পুরুষ মানুষের জীবন—ত্যাগ আর দায়িত্বের আরেক নাম হলো “পুরুষ”।
পুরুষ কি সত্যিই শুধু উপার্জনের যন্ত্র?
আমরা কি কখনো ভেবে দেখি, এই মানুষগুলোরও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আছে? তাদেরও যত্ন দরকার? শুধু পরিবারের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিলেই কি একজন পুরুষের আসল দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?
শ্রদ্ধা সেই বাবাদের, সেই পুরুষদের—যারা নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জীবন উৎসর্গ করেন!