রাকিবুল ইসলাম রাহান
চর জাঙ্গালিয়ার সন্ধ্যাটা আজ যেন অন্যরকম।
চারপাশে অদ্ভুত এক গম্ভীর প্রকৃতি নিজেই যেন থমকে গেছে।
প্রতিদিন বিকেলে আম কুড়াতে ছুটে চলা ছেলেমেয়েদের দলও আজ মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
সেই চিরচেনা কোলাহল, বাচ্চাদের খিলখিল হাসি সব যেন কোথায় হারিয়ে গেছে।
গাছে গাছে শালিকেরা যেমন সন্ধ্যার আগে গা ঢাকা দেয়,
তেমনি গ্রামের মানুষগুলোও আজ অকারণে তাড়াহুড়ো করে ঘরে ফিরছে।
চকের মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট জটলা,
চায়ের দোকানগুলোতে চলছে ফিসফিস আলোচনা।
বিষয়ের কেন্দ্রে শুধু একটিই প্রশ্ন,
কে আসবে ক্ষমতায়? কে হারাবে?
আবার কারা-বা গড়ে দেবে নতুন ভোর?
শফিক চাচা চায়ের দোকানে টেলিভিশনের শব্দ একটু বাড়িয়ে বললেন,
ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুনছি ২০২৬ পর্যন্তই থাকবে।
হাকিম মিয়া মুখ গম্ভীর করে কাঁচের চায়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলেন,
কিন্তু ভাই, বিএনপির মিছিল দেখছেন? পাঁচটা গ্রামের লোক একত্রে ঢাকায় দিকে রওনা দিয়েছে।
সম্ভবত এবার বিএনপি জয়লাভ করবে।
বেলালের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন যুবক নিঃশব্দে শুনছে কথাগুলো।
কোনো চোখে আগ্রহ, কোনো চোখে সংশয়।
এক অজানা ভবিষ্যতের প্রতীক্ষায় তারা যেন
দিশেহারা।
মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে আছে কবির আর রাকিব।
কবির রাজনীতিতে উৎসাহী, খবর রাখে দেশ-বিদেশের।
রাকিব বরাবরের মতো চুপচাপ, ভাবনামগ্ন।
কবির বলল,
ভাই, রাখাইন করিডরের কথা শুনছো? চীন আর আমেরিকা দুই দিক থেকেই বাংলাদেশকে টানাটানি দিচ্ছে।
রাকিব ধীর কণ্ঠে জবাব দিল,
এই টানাটানির মাঝখানে পিষ্ট হই আমরা মধ্যবিত্তেরা। আমাদের জীবনে তো পরিবর্তনের নামে শুধু চাপই বাড়ে।
এই মুহূর্তে ভেসে আসে মসজিদের সন্ধ্যার আজান।
চারপাশে দোকানপাট একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।
মানুষ ঘরে ফেরে, কিন্তু বাতাসে ভাসতে থাকে এক অনির্ধারিত অস্থিরতা।
চর জাঙ্গালিয়া নিঃশব্দে অপেক্ষা করে
কারা আসবে, কারা বিদায় নেবে,
আর কারা গড়ে তুলবে এক নতুন ভোরের স্বপ্ন।