কলমে: এম এ লতিফ
আমি আমার কথা বলছি না। আমি এক হতো দরিদ্র রিকশা চালকের কথা বলছি।
নাম রাজ কুমার, বয়স আশির কাছাকাছি, সবাই তাকে রাজ বলে ডাকতো। নাম শুনে আপনিও অবাক হবেন। সত্যি একসময় তার আধিপত্য বিস্তার ছিলো। সবাই তাকে ভয় পেতো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কখন কার জীবনে অধঃপতন নেমে আসে একমাত্র ভাগ্য বিধাতাই জানেন।
রাজ কুমারের দুজন ছেলে ছিলো। কিন্তু ছেলে দুজন খুব বেপরোয়া ছিলো। সারাক্ষণ মারামারি করেই দিন কাটাতো। আর বাপের জমি বিক্রি করে ভোগ বিলাসী জীবন যাপন করতো। এমনি করে জমি বিক্রি করতে করতে বাপের বাড়ি ভিটা সব বিক্রি করে দিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে গেলো!
শুরু হলো দুই ভাই এর সন্ত্রাসী চাঁদাবাজী, মদের নেশা। আর কতেদিন এভাবে চলবে। হঠাৎ করে দুই ভাই চাঁদাবাজী করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ে তারা দুজন মারা গেলো।
এদিকে রাজ কুমার ছেলেদের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়লো। টাকা পয়সা নাই একেবারে নিঃস্ব নিজের চিকিৎসা করার মতো কোনো টাকা নাই।
নিরুপায় হয়ে একটা পেটেল চালিত রিকশা ভাড়া করে চালানো শুরু করে দিলো।
অসুস্থ শরীর বয়সের ভারে ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারে না। কেউ তার রিকশায় উঠতে চায় না। কি আর করবে সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে কোনো রকম সামান্য কিছু খাবার কিনে তাই খেয়ে দিন কাটায়!
এভাবে রিকশা চালিয়ে তার আর দেহ চলে না, তবু মাথায় অনেক চিন্তা রিকশা মালিকের ভাড়া আগে পরিশোধ করতে হবে। অনেক কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে কোনো রকম আগে রিকশা মালিকের টাকা জোগাড় করে। কোনোদিন হয়তো হাতে সামান্য কিছু টাকা থাকে আবার কোনো কোনো সময় মালিকের টাকা পরিশোধ করার পর হাতে কোনো টাকাই থাকে না।
আমাদের সমাজটা এতোই নিষ্ঠুর কেউ তার খবর রাখে না। বিধির বাম হঠাৎ একদিন বাসের ধাক্কা খেয়ে রাজ কুমারের নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। রক্তাক্ত হয়ে গেলো রাজপথ!
আজ আর সেই রিকশা চালক কারো কাছে হাত পেতে বলবে না আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগছি, আমায় দুটো টাকা দাও! এভাবেই কতো রিকশা চালকের জীবন অকাতরে হারিয়ে যায়, কেউ তার খবর রাখে না!