ভূমিকা:
ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যেখানে জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। এমনকি আহার করার মতো সাধারণ কাজেও রয়েছে ইসলামের শিক্ষা, আদব ও শিষ্টাচার। সঠিক নিয়মে খাওয়া শুধু দেহের খাদ্য নয়, বরং রুহানিয়াতেরও পরিপূর্ণতা আনে। তাই একজন মুসলিমের উচিত আহারের সময় হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সুন্নত ও আদবসমূহ পালন করা।
আহারের সময় যেসব কাজ করা সুন্নত ও আদবসম্মত:
১. বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"তোমাদের কেউ যখন খায়, সে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে, আর যদি শুরুতে বলতে ভুলে যায়, তবে বলুক: ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’।” (তিরমিজি)
২. ডান হাতে খাওয়া:
"তুমি ডান হাতে খাও এবং ডান হাতে পান কর, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়।" (মুসলিম)
৩. নিজের সামনে থেকে খাওয়া:
নবীজি (সা.) বলেন:
"ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।" (বুখারী)
৪. আহার একসাথে করা:
"তোমরা একত্রে আহার করো, এতে বরকত থাকবে।" (আবু দাউদ)
৫. গরম খাবারে ফুঁ না দেয়া:
"তোমরা গরম খাবারে ফুঁ দিও না।" (আবু দাউদ)
৬. খাবার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা:
"যে ব্যক্তি খাওয়া শেষ করে বলে— ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত‘আমানী হাযা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুয়্যাহ’, তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।" (তিরমিজি)
আহারের সময় যে কাজগুলো নিষেধ:
১. বাম হাতে খাওয়া:
রাসূল (সা.) বলেন:
"শয়তান বাম হাতে খায়, সুতরাং তোমরা বাম হাতে খেও না।" (মুসলিম)
২. খাদ্য অপচয় করা:
আল্লাহ বলেন:
"তোমরা খাও ও পান কর, তবে অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।" (সূরা আ‘রাফ: ৩১)
৩. অতিরিক্ত খাওয়া:
"মানুষের জন্য কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা তার পিঠ সোজা রাখে। যদি বেশি খেতে চায়, তবে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য, ও এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য রাখুক।" (তিরমিজি)
৪. খাবারের নিন্দা করা:
হাদীসে এসেছে, "নবী (সা.) কখনো কোনো খাবারকে নিন্দা করেননি। পছন্দ হলে খেতেন, না হলে ছেড়ে দিতেন।" (বুখারী)
৫. খাওয়ার সময় অনর্থক কথা বলা, হাসাহাসি বা ঝগড়া করা।
আহারের সময় দোয়া ও করণীয় সংক্ষেপে:
আহারের পূর্বে দোয়া:
"বিসমিল্লাহ"
(ভুলে গেলে: "বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু")
আহারের মাঝে করণীয়:
ধীরে ধীরে খাওয়া
ডান হাতে খাওয়া
নিজের সামনে থেকে খাওয়া
খাবারের প্রশংসা করা
খাবারে শরিক থাকলে একসাথে খাওয়া
আহারের পরে দোয়া:
"আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত‘আমানী হাযা, ওয়া রাযাক্বানীহি, মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুয়্যাহ।"
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই খাদ্য দিয়েছেন এবং আমার শক্তি ও সামর্থ্য ছাড়াই তা আমাকে রিযিক হিসেবে দিয়েছেন।
উপসংহার:
আহারের সময় সুন্নত অনুযায়ী চলা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই রক্ষা করে না, বরং তা আত্মিক উন্নতিরও কারণ হয়। বরকতময় আহার জীবনকে করে তোলে প্রশান্তিময়। আসুন আমরা আহারের আদবগুলো নিজে শিখি, পরিবারকে শেখাই এবং সমাজে তা ছড়িয়ে দিই।
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: আহমেদ হোসাইন ছানু। উপদেষ্টা সম্পাদক: মোঃ রহমত আলী। উপদেষ্টা: মোঃ জাবেদুল ইসলাম। সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ রেজন মিয়া। কার্যালয়: উত্তর উল্যা, ভরতখালী, সাঘাটা, গাইবান্ধা, বাংলাদেশ। মোবাইল: 017013680087