প্রতিবার ঈদ মানেই ছিল ঘরে ফেরা, আপনজনের মাঝে ফিরে যাওয়া, মা-বাবার মুখে হাসি দেখা। কিন্তু এবারের ঈদটা হয়ে গেল একটু ভিন্নরকম। কারণটা একটা ছোট্ট ব্যতিক্রম — নির্ধারিত সময়ের আগেই মাদ্রাসায় ছুটি হয়ে গেছে। আর সেই জন্যেই ঠিক সময়ে টিকিট কাটতে পারিনি।
ছুটি পেয়ে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ নিয়ে ছুটে গেলাম টিকিট কাউন্টারে। গিয়ে বললাম, “মামা, টিকিট আছে? মূল্য যতই হোক, আমি কাল রাতের জন্য তিনটা টিকিট চাই।” মামা বললেন, “কুড়িগ্রাম পর্যন্ত যেতে পারবেন। বাকিটা পথ আপনাকে নিজের মতো করে ম্যানেজ করতে হবে।” আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, যত কষ্টই হোক, বাড়ি তো ফিরতে পারব।
তিনি বললেন, “কোম্পানির রেট ১০২০ টাকা। তবে আপনি যদি আমাদের ১০৫০ করে দেন, তাহলে দিতে পারি। আর আপনি হাদিয়া হিসেবে যা খুশি দেন, তাও চলবে।” আমি বললাম, “আচ্ছা, ঠিক আছে, তিনটা টিকিট দেন।”
কিন্তু কিছুক্ষণ পর মামা হঠাৎ বললেন, “মামা, ঢাকা থেকে কল এসেছে, আমাকে এখনই রওনা দিতে হবে। টিকিট দিতে পারব না, পাশের জনের কাছে নেন।” পাশের জনকে বললাম, তিনি স্পষ্ট জানালেন, “ওনার টিকিট আমার কাছে নেই, আপনি রাতেই আবার আসেন।”
অগত্যা রাতে আবার গেলাম। তখন বলল, “ভাই, ভাড়ার দাম বেড়ে গেছে। এখন ১১৫০ টাকা করে দিতে হবে।”
প্রতিটি ঈদেই আমাদের এই একই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কখনো দাম, কখনো টিকিটের অভাব, কখনো আবার অস্পষ্ট আশ্বাসের ঝুলিতে আটকে থাকি। অথচ আমরা কখনোই স্বাভাবিকভাবে, নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরতে পারি না। কষ্ট লাগে, অভিমান হয়, কিন্তু কিছুই করার নেই।
আমরা যারা সীমিত আয়, সীমিত সুযোগ নিয়ে বাঁচি, তাদের জন্য ঈদে বাড়ি ফেরা যেন এক যুদ্ধ। এত বছরেও এই পরিস্থিতির বদল হয়নি। জানি না সামনের বছর পারব কিনা নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে। তবে একটা আশা, একটা চাওয়া — সরকার যেন আমাদের এই সাধারণ অথচ অমূল্য চাওয়াটাকে গুরুত্ব দেয়। যেন অন্তত ঈদের সময়টুকু আমরা নিশ্চিন্তে, সম্মানের সাথে আমাদের আপনজনের কাছে ফিরতে পারি।
খুরশিদ বিন নজির
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: আহমেদ হোসাইন ছানু। উপদেষ্টা সম্পাদক: মোঃ রহমত আলী। উপদেষ্টা: মোঃ জাবেদুল ইসলাম। সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ রেজন মিয়া। কার্যালয়: উত্তর উল্যা, ভরতখালী, সাঘাটা, গাইবান্ধা। মোবাইল: 01701368008।
স্বত্ব সংরক্ষিত - ২০২৫