জীবনের গোধূলি বেলায়
যাত্রা করেছে বিদায়ের পালকি চড়ে,
বার্ধক্য গ্রাস করেছে যৌবনের তেজ।
নিলাঞ্জনের আচল ছিড়ে
জগতের মায়া কাটিয়ে,
মিলিয়ে যাচ্ছে শূন্যের গর্ভে,
অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে ধরনীর বুক হতে।
জীবন প্রদীপ ফুরিয়ে এসে
মলিন মুখে বিদায় জানায়।
জীবনের প্রতিটি ধাপে নানাস্থান ভ্রমে,
বইচিত্রে জীবন একে পদের সোনার পরশ ছুঁইয়ে এসে
চোখ দুটো ঘুমে ঢুলছে পশ্চিম গগনে চিরনিদ্রায় শায়িত।
জন্মলগ্নে প্রকৃতি হেসেছিল সোনালি হাসিতে,
তার জন্মকে স্বাগত জানিয়েছিল সকলে, দোর খুলে,
যৌবনে তার প্রচণ্ড তেজ ধারণ করেছিল অগ্নিরূপে।
প্রচণ্ড বীরত্ব, রাগ আর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে
বিশ্বকে সে সাক্ষর দিয়েছিল উজ্জ্বলতার সোনালি সুতায়।
কত আলপনা সে বুনেছিল সোনার তুলিতে,
এঁকেছিল কত রঙিন ছবি তার।
নতুনকে করতে নিবেদন,
ছাড়তে হলো নিজ পথ।
তার বিদায়ের শোকে মুহ্যমান প্রকৃতি,
বেদনার ছায়া ঘনিয়ে আসে;
রূপের সাজসজ্জা, অলংকার খুলে ফেলে,
প্রকৃতি আবৃত হয় ধূসরতার চাদরে।
জলজলে রঙিন পোশাক ছেড়ে,
বিবরণ চাদর শরীরে জড়ায়,
হারানোর কষ্টে মুখে ধীরে ধীরে
কালো আবরণ পরে যায়।
শোকে নিরব হয়েছে সব,
গান-বাজনা, হুল্লোড়,
চাঞ্চল্য নিস্তব্ধতায় ডুবেছে।
প্রকৃতি ভাষা হারিয়েছে,
মুখে নেই কোনো শব্দ,
শুধু শোনা যায় তার শনশনে দীর্ঘ শ্বাস,
নিশ্বাসে বেদনার ধ্বনি বাজে।
নেই কোনো উৎসবমুখরতা,
প্রকৃতি যেন হাসতে ভুলে গেছে;
প্রচণ্ড শোকে কণ্ঠস্বর ভারি হয়ে গেছে,
আওয়াজ আসে না।
একাকীতে ভুগছে সকল,
সঙ্গী বিদায়ে নিঃসঙ্গ জীবন,
আর কেউ সোনাজলে স্নান করায় না
সোনালি মিষ্টি হাসি মাখা মুখ আর দৃশ্যমান নয়।
শোক কাটিয়ে এগোতে থাকে সমুখপানে,
থামে না জীবনের গতি বয়ে চলে অবিরত।
তবুও জীবন স্বপ্ন দেখে,
নতুনের আশায় জেগে থাকে,
নতুন আগমনকে স্বাগত জানানোর প্রহর গোনে।
নতুন অতিথিকে দেখার আশায় –
দু’চোখ মেলে থাকে।
আধার দিগন্তের গর্ভ হতে জন্ম নিয়েছে নতুন অতিথি;
ধরনী কালো আচলে মুড়িয়ে
তাকে কোলে তুলে নিয়েছে।
খুশিতে তার কোল জুড়ে বইছে রূপালি ঝর্ণা,
মাত্রিতার ছোঁয়ায় তার দেহজুড়ে চন্দন ছেয়ে যায়,
খুশিতে জলজল করছে অগণিত মণি-মুক্তা।
ছোট্ট মোমের পুতুলের শরীর হতে
মোম গলে গলে পড়ছে,
মোমের স্নিগ্ধ পরশে ঘুমন্ত মুখগুলো সিক্ত হচ্ছে।
তার জন্মে খুশির ঝিলিক ফুটেছে,
দিগন্তের মুখে স্নিগ্ধ হাসি,
আনন্দের রূপালি বন্যায় ভেসে যায় চারপাশ।
তাকে অভিবাদন জানাতে
জড়ো হয়েছে অজস্র ঝিলমিল বিন্দু,
জলতে জলতে নিভে গিয়ে
প্রণাম জানায় নব অতিথিকে।
তার ঝলমলে সৌন্দর্যে
লজ্জা পেয়ে ক্ষুদ্র ফোঁটাগুলো
জলে জলে আবার নিভে যায়।
নতুন অতিথির স্নিগ্ধ হাসিতে
নিষ্পাপতার ঢেউ খেলে যায়,
যেন স্বর্গের একটি টুকরো
মর্ত্যলোকে আবির্ভূত হলো।
তার কোমল হাসিতে মুক্তো ঝরে,
ফোটে শত বেলি-শিউলি।
খুশির হাওয়া দোল খায় পশুপাখির হৃদয়ে,
ছুটে আসে স্নিগ্ধতার পরশ মাখতে,
প্রকৃতি মহুয়ার আতর মাখে,
পোকামাকড়গুলো পাখা মেলে
উড়ে এসে দেয় শুভেচ্ছা।
তার জন্মদিনের উৎসবে
ধূম পড়ে যায়,
মিষ্টি সুরের শনশন বাঁশি বাজে;
কালো উদ্যানে ঝিলমিলে আলোকসজ্জা—
মিটমিট করে বাতি জ্বলে, আবার নিভে যায়।
তার কোমল স্নেহের পরশ
সকলকে হাতছানি দেয়,
ডেকে আনে ঘরের বাহিরে।
তার খুশির জোয়ারে
সব দুয়ার খুলে যায়,
মন আর একলা থাকে না ঘরের কোণে।
তার পরশখানি আলিঙ্গন করতে
সকলেই ভিড় করে বনে;
তার স্নিগ্ধ ছোঁয়া ঠোঁটে—
চুমতে মন আর থাকে না ঘরে।
তার জন্মে সাড়া পড়ে যায়,
তাকে জড়িয়ে গান শোনায়;
ভূমিষ্ঠ হয়ে চুরি করে নিয়েছে
চোখের পলক হতে ঘুম।
কালো আচলের ছায়াতলে
ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে সে,
যৌবনে রূপবতীর রূপের ঝলকে
ঝলমল করে পৃথিবী।