আমার শৈশব ছিল এক অদ্ভুত আনন্দে ভরা, যেখানে প্রতিটি দিন ছিল নতুন একটা অভিযানের মতো। গ্রামে আমাদের বাড়ি ছিল পুকুরপাড়ে, আর সেই পুকুর ছিল আমাদের খেলার এক অনন্ত দুনিয়া। দিনের শুরু হতো, পাড়ে দাঁড়িয়ে জল ঠান্ডা লাগানো পিপঁল গাছের ছায়ায় সূর্যোদয়ের সাথে। আমরা, আমি আর আমার সঙ্গী বন্ধু আমরানকি, কখনো খালের কিনারে, কখনো পুকুরে, কখনো আবার মাঠে ঘুরে বেড়াতাম।
আমরানকি ছিল এক অদ্ভুত ধরনের বন্ধু—স্মার্ট, কিন্তু জানতাম না কখন কী করবে! প্রথম কাজ ছিল, আমগাছের নিচে চলে যাওয়া। গাছগুলো এত বড় ছিল যে, একবারে কয়েকটি আম চুরি করে ফেলতে পারতাম। আর আমাদের প্রিয় ছিল সে সব পাকা আম, যে গুলি শুধু একটু ঝুলে থাকলেই, টানা নাড়াতে হলেই পড়ে যেত। আমরানকি চিৎকার করে বলত, “দ্রুত, পেছন দিকে!”—এমন সময়, আম গুলি পড়তো, আর আমরা মজা করে খেয়ে ফেলতাম। যদি কখনো ধরা পড়তাম, তাও হতো “ফিরে এসে আবার পেতে!”—আমরা জানতাম, দাদু বা বাবা কখনোই আমাদের তাড়া করে না, শুধু হেসে বলতেন, “ভালো তো!”
পুকুরে গোসলের দিনগুলো ছিল সবচেয়ে আনন্দের। দুপুরের রোদ গায়ে মাখতে মাখতে, একগাদা ছেলে-মেয়ে জড়ো হয়ে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। পাড়ের মাটি গরম হয়ে উঠত, কিন্তু তাতে কী, আমরা পুকুরের ঠান্ডা পানিতে দাপাদাপি শুরু করতাম। আমরানকি যখন খালের ধার দিয়ে চলে যেত, সেও সেই পানি খেয়ে আসত, আর আমরা হাসতে হাসতে জলে ঝাঁপাতাম।
আর ঘুডি? সেই ছিল আমাদের সেরা খেলা! একটা পলিথিন আর কাঠের টুকরো দিয়ে কত ঝলমলে ঘুডি বানিয়ে, মাঠের মধ্যে দৌড়াতাম। আর কখনো কখনো, তৌডে বেডানো—তাহলে পায়ের পাতা দিয়ে কাদায় ঘুরতে ঘুরতে কখনো দূরের মাঠে চলে যেতাম, পাখিদের ডানার মতো গুঞ্জন শোনা যেত।
সে ছিল এক মুক্ত হাওয়ার দিন, ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেছি স্বাধীনতার রাজ্যে। আমাদের খেলা, আমাদের অজানা পথ, আর সেই আমগাছ, পুকুর, খাল—সবকিছু এক অমলিন সুখের অংশ ছিল।
কিন্তু এখন, শহরে চলে আসার পর এসব কিছুই হারিয়ে গেছে। আমরানকি, পুকুর, খাল—সব কিছু যেন এক সোনালি স্মৃতি হয়ে গেছে। শৈশবের সেই সব দিনগুলো কোনোদিনও ফিরবে না, তবে কিছু স্মৃতি আছেই, যা কখনো ভোলা যাবে না।
তখনকার আম চুরির আনন্দ, পুকুরে খালের মাঝে হাসির প্রতিধ্বনি, আর ঘুডি উড়ানোর ঝুলন্ত দিন—সব স্মৃতি এখনো মনের কোণে এক রেশ রেখে যায়।
কবি পরিচিতি: মোহাম্মদ ফয়সাল—জন্ম ৭ফেব্রুয়ারি ২০০১ খ্রিস্টাব্দে, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার পূর্বখইয়াছরা গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ ফোরকান, মাতা বিবি ফাতেমা। গ্রামের প্রকৃতি এবং মানুষের স্বপ্ন, তাঁর লেখার প্রধান অনুপ্রেরণা। তাঁর কলমে ফুটে ওঠে সমাজের দুঃখ ও গ্রামবাংলার চিত্র, ও নানা বিষয়ে প্রতবাদ, যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ” ।সে বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।অজানা স্বপ্নের পথে” “নারীত্বের বেদনা” “ডাকবাক্স” যৌথ কাব্য গ্রন্থে তার উল্লেখ যোগ্য প্রকাশনা।