
রকিবুল ইসলাম
নদীমাতৃক আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এদেশেরই একটি অতি প্রাচীন জনপদ যশোর। এই যশোরেরই বক্ষপিঞ্জিরা ভেদ করে বেয়ে চলেছে ভৈরব নদ। অতি প্রাচীন নদ এটা। শহর থেকে একটু পূর্বে এগিয়েই বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দপ্তর। দক্ষিনে বিসিক শিল্প নগরী এলাকা। তারও দক্ষিনে অখ্যাত একটা গ্রাম,নাম সীতারাম পুর। বুড়ি ভৈরব এই গাঁয়েরই পাশ দিয়ে বয়ে গেছে।প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের মত অধিবাসীদের বসবাস এই ভৈরব উপকূলে। এটাই আমার প্রিয় জন্মভূমি।ছোট বেলা থেকেই অতি হর্ষ আমোদে বেড়ে উঠেছি।বলতে পারেন সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্মেছি।বাবা যশোর পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন।বড় ভাই ছিলেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী।আর তাছাড়া দাদার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি নিয়ে বেশ ভাল সম্পত্তিই ছিল আমাদের। পরবর্তী কালে বিভিন্ন সময়ে দূর অবস্থায় পতিত হয়ে সবটাই খোয়া গেছে। যাইহোক,সেসব কথা থাক। আমার শৈশবটা কিন্তু খুব মধুর কেঁটেছে।আমি, লিওন,পলাশ, আজাদ একসাথে বেড়ে উঠেছি।ভালো বোঝাপড়া বা সখ্যতা ছিল আমাদের মাঝে বেশ। এখনও আছে।তবে, কেন জানি সেই দিনগুলোর সুখের কাছে এখনকার সুখ কিছুই না।সীমা,রেখা আর স্বপ্না ছিল আমাদের সহপাঠী।লিওন ও আজাদ রেখাকে,পলাশ সীমাকে আর আমি স্বপ্নাকে ভালবাসতাম।ধ্যাৎ!ঐটুকু বয়সে ভালবাসা হয় না কি! ভালবাসার কি বুঝতাম আমরা।তবে, পছন্দ করতাম এটাতো ঠিকই। বিকালে আম বাগানে গল্লাছুট (গ্রামের ভাষায়:গাদি ভোম) খেলতাম আমরা সকলে মিলে। আমাদের সহপাঠী ছিল কয়েক জন বড় আপা।সন্ধ্যা হলে শীতের সন্ধ্যায় এক যোগে আগুন পোহাতাম।আর তারপর লুকোচুরি খেলতাম।কেউ বাড়ির কোণে,কেউ খড়ের গাদায় লুকাতো।কেউ আবার লুকানোর নাম করে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত।ভাবা যায়!একে কিভাবে খুঁজে পাবেন আপনি!?বেশ কাটছিল দিনগুলো। সোনার খাঁচায় বন্দী করে রাখার মত।বড় ভাইদের পিরিতের চিঠি বিলি করতাম।বড় কেউ প্রেমজ কারণে পরস্পর দেখা করতে গেলে পাহারা দিতাম।পাছে অভিভাবক গোছের কেউ যদি দেখে নেয়!পলাশ-সীমার সম্পর্কটা অনেক দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল যদিও তা পূর্ণতার স্বাদ পাইনি।লিওন বা আজাদ রেখার কাহিনী তো এগোলোই না।আর আমি ? এক চড়েই সব শেষ।স্বপ্নার ভাই টিপু আমার আবাসিক শিক্ষক ছিলেন।মানে উনি আমাদের বাড়িতে থাকতেন আর আমাকে পড়াতেন। ওদের পরিবার আর আমাদের পরিবারের মাঝে সম্পর্কটাও ছিল মধুর। একবার স্বপ্নাকে চিঠি লিখলাম। আমাদেরই সহপাঠী ওর এক চাচাতো ভাই সাইফুলকে দিয়ে চিঠিটি পাঠালাম।আমার সাথে যেন দেখা করে এটাও বলে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু,বিধি বাম। স্বপ্না এলো না।এলো ওর বড় বোন শিউলি।এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল: তুই লিখেছিস এটা। অস্বীকার করার কোন উপায় ছিল না। হাতের লেখা যে আমার!আমাকে সে বলল:তুই আমাদের নিজেদের লোক হয়ে এমন কাজ করতে পারলি?বলতে বলতেই আমার প্রশস্ত গালে একটা চড় বসিয়ে দিল সপাটে।আর বাবা মাকে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে দিবে এই মর্মে ভয়ও দেখাল।কিংকর্তব্যবিমূঢ়আমি চোয়ালে হাত দিয়ে বেরিয়ে আসলাম ওখান থেকে। আমার অবুঝ মনের ভালবাসার ইতি বা যবনিকাপাত ঘটল ওখানেই।আজ বেলা শেষের দিকে এসে সেই সব কথা খুব মনে পড়ে। কেমন ছেলে মানুষ ছিলাম আমরা!