নার্গিস আক্তার
কৃষকের ঘরে নতুন বউ নাম তার ডিনা। বয়স ১২-১৩ হবে।রাঙা বউ আইলো ঘরে আনন্দের ফোয়ারা ঝরে। বেশ সুন্দর মিষ্টি মুখ। তবে মাত্র পাঁচ সাত দিন হল বিয়ে হয়েছে। এখনো নতুন পরিবেশ নতুন জায়গা আপনজনকে হারিয়ে নতুন পরিবেশে আগমন। এখন বাড়ির সকলের দায়িত্ব নতুন বউটির উপর।গোয়াল ঘরের গরুর গোবর ফেলেছে, ঘরের ডোয়া নেপেছে, উঠোন ঝাড়ু দিয়েছে। থালা-বাসন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছে। রান্নাবান্না ঘরের সকল কাজকর্ম শেষ করেছে। এমন সময় দেখে কলসিতে পানি নেই। এখন পানি আনতে নদী ঘাটে যেতে হবে। নতুন বউ রওনা হলো কাখে কলসি নিয়ে। আঁচল দিয়ে বড় একটা ঘোমটা টেনে নদী কুলে উপস্থিত হল। ঘাটে বাড়ির ছোট বড় অনেক পুরুষ গোছলে নেমেছে। নদীর কূলে বেশকিছু নৌকো বাঁধা। আবার কয়েকটা নৌকা নদীর বুকে পাল তুলে দূর কোন অজানা ঠিকানায় যাচ্ছে। সবাই যেন নববধূর দিকে চেয়ে আছে। নতুন বউকে পানি নদী থেকে আনতে হবে। ফিরিবার কোন উপায় নেই তাই বধু একটু বেশি করে ঘুমটা টেনে নামলো নদীর কূলে। নতুন বউ খুব লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু কোন উপায় নেই তাকে শ্বশুরবাড়ির আদেশ পালন করতে হবে। পানি ছাড়া সে কিভাবে বাড়ি যাবে ।তাই ঘুমটা টেনে কলস ডুবিয়ে পানি ভর্তি ভরা কলসি কাখে নিয়ে ফিরছে বাড়ির দিকে। পথে হলো ভাসুরের সঙ্গে নতুন বইয়ের দেখা অমনি পথ ছেড়ে লাজে রাঙা বউ অন্য পথে গেল। ভাসুর সেখান থেকে চুপচাপ চলে গেল নতুন বউ আস্তে আস্তে কলস নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। লজ্জায় মুখ রাঙা হয়ে গেল। আগেকার দিনে ভাসুরা ছোট ভাইয়ের বউকে সম্মান দিত এবং স্নেহ করতো। বউরা ভাসুরকে অনেক সম্মান ভক্তি শ্রদ্ধা করতো। এখন কি আর সেদিন আছে, সম্মানে পড়েছে ভাটা। লাজে রাঙা বউ মাথা উঁচু করে কথা কয়। নেই তো আগের মত স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসার দিন। বারো তের বছরের মেয়ে যে মায়ের বাড়ি হাতটা ধুয়ে ভাত খায়। সেই মেয়ের উপর শ্বশুরবাড়ির সমস্ত দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা। সংসারে গরুর মতো খাটা সে কি কষ্ট একমাত্র রাঙা বউ বলতে পারে। এত খাটাখাঁটি করে রাঙা বউ হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে রাঙা বউয়ের পেটে সন্তান আছে সে আর আগের মতন কাজ করতে পারে না। এখন শ্বশুর বাড়ি কাজ ছাড়া ভাত খাওয়া অনেক কথা শুনতে হয়। হঠাৎ করে নতুন বউ এর বাবা এসে মেয়েকে নিয়ে গেল। মেয়েটি একটু স্বস্তি পেল শ্বশুরবাড়ির খাটাখাটনি থেকে অন্তত কিছুদিনের জন্য মুক্তি পেল। সবাই তাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করে। বিশেষ করে শ্বশুরবাড়ির কে কেমন জানলো? কিরকম তাদের স্বভাব কিন্তু মেয়ের মুখ ফেটে কিছুই বলেনি? শুধু তার মায়ের কাছে বলেছে আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করায়। আমি আর ওই বাড়িতে যাব না। কিন্তু এখন আর ফিরবার পথ নেই। বাপের বাড়ি এসে আরাম এবং শান্তিতে তার দিন কাটছিল। কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর নতুন বউর বাচ্চা হতে গিয়ে ,নতুন বউ টি মারা গেল। এখন মেয়ের মা-বাবার বুদ্ধি হয়েছে আমি ছোট মেয়েটাকে কেন বিয়ে দিলাম? আশেপাশে সবাই খারাপ বলছে! এতটুকু মেয়েকে কেউ বিয়ে দেয়। গ্রামের মানুষ নির্বোধ, অশিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলে শান্তি। শান্তি যে বিপদের পথে নিতে পারে তা ভাববার মতন জ্ঞান বুদ্ধি গ্রামের লোকের বিশেষ করে অশিক্ষিত লোকের থাকে না। ডিনা বাচ্চা প্রসবের সময় চিরতরে বিদায় হল বাচ্চাটিও মারা গেল। ডিনাকে আর শ্বশুর বাড়ি যেতে হলো না। ডিন তার মাকে বলা কথাটা বাস্তবে রূপ নিল।আমি আর ওই বাড়ি যাবো না। সত্যি সত্যি তাই যেতে হলো না। ডিনার জীবন অকালে পরিসমাপ্তি ঘটলো।
গোপালগঞ্জ, ইসলামপাড়া।