✒ সাবিত রিজওয়ান
[গত সপ্তাহে তাজুল স্যার বলছিলেন,"আরএম তুফান, ম্যাট্রিক আর বেশি দূরে না। পড়ালেখা করতে হবে তো, নিয়মিত কোচিং ও স্কুলে যেতে হবে।" তাই কিছুদিন থেকে নিয়মিত কোচিং যাওয়া শুরু করেছি। আমিতো অমনোযোগী ছাত্র তবু পড়ালেখা করার চেষ্টা করতেছি। আমাকে সবাই তুফান নামেই ডাকে। আমি একটু জেদি ছেলে। কাননসহ সাইকেলে চরে স্কুলে আসলাম। কানন দোতলায়। আমি টিউবওয়েলের ওখানে আছি। সাথে রয়েছে রাছেল ও শাহজালাল। রাছেল অবশ্য এখানে পড়ালেখা করেনা। আমরা শাহজালালকে জালাল বা পল্লব নামে ডাকি। গাইবান্ধা থেকে শাহজাহান আমাকে কল করেছে।]
শাহজাহান: কিরে কেমন আছিস?
তুফান: আলহামদুলিল্লাহ।
শাহজাহান: তুফান আজকে গাইবান্ধায় আসতে পারবি?
তুফান: কেন! কিছু বলার থাকলে বল।
শাহজাহান: কয়েক বন্ধু মিলে আড্ডা দিতাম, ঘুরাফেরা করতাম। আসলে ভাল হত।
তুফান: বুঝলামনা কী ভাল হত, আমিতো এখানে ঘুরাফেরা করি। তোরাতো থাকিস দূরে দূরে।
শাহজাহান: গতকাল একটি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছি বিয়ে বাড়ির। তুই যদি আসিস তবে আজ রাত্রিবেলা ছেলে পক্ষের সাথে আমরা যেতাম।
ছেলের সাথে তুই, আমি আর কয়েক জন লোক থাকত।
তুফান: আমি একজন না গেলেও সমস্যা হবেনা। পড়াশোনা করতে হবে, বেশিদিন নাই পরীক্ষার।
শাহজাহান: বেশ তো। বন্ধু নাটের গুরু মিলন।
তুফান: মাফ কর, অন্য কাউকে নিয়ে যা।
শাহজাহান: আরে আয়না দেশের বাড়িতে! তিনটা দিন থেকে যা।
তুফান: আমি কী বিদেশে আছি! রংপুরও ত বাংলাদেশের 🇧🇩 মধ্যে। এমনভাবে বলতিছিস যেন তোর বিয়া। তুই বুঝতেছিস না আমার কাছে টাকা নাই। থাকলে যাইতাম।
শাহজাহান: আমি কিছু টাকা দিতেছি আর তুই কিছু সংগ্রহ কর এই মুহুর্তে। তোদের বিয়েতে আমি যাব, আমার বিয়েতে তুই/তোরা আসবি।
[শাহজাহানের সাথে কথোপকথন শেষ হলো। রশিদ ভাইকে কাছে কল করলাম।]
তুফান: মন্ত্রী তোর কাছে কিছু টাকা ধার পাওয়া যাবে?
রশিদ: গতকাল বললে চেষ্টা করতাম। এখন সাথে সিগারেট খাওয়ার সামর্থ্য নাই। সাজু মিয়ার কাছ থেকে ৫টাকা নিছম ব্লাক ডায়মন্ড কেনার জন্যি।
তুফান: কই আসিস? ৫টাকায় ডায়মন্ড পাওয়া যায় (অবাক কন্ঠে)।
রশিদ: সাজু মিয়ার সাথে গটিয়ায় আছি, আজ এক মেয়ের বিয়ের আয়োজনে।
তুফান: তোরা শশুর (চাচা শশুর) জামাই বন্ধু বন্ধু তাই না। তোর ফার্মের কি খবর?
রশিদ: ভাল, আয় এখানে ঘুরে যা।
তুফান: যাওয়ার জন্যিই টাকা চাচ্ছি। ওখানে এত কীসের ঘন গন বিয়ে রে। আমাকেও আমার বন্ধু ডাকল বিয়ে খাইতে।
রশিদ: য্যাটে (যেখানে) নৌকা ⛵ বাইচ হছিল, অ্যাটে (ওখানে) রে।
তুফান: কোটে ব্যান (কোথায় যেন জানিনা)।
রশিদ: তা কখন আসবি?
তুফান: জানাইম আলা। তোর বন্ধুর সঙ্গে মেয়েটার বিয়ে!
রশিদ: হ মোক বঙ্গবন্ধু বানাবি নাকি; তোর নামের মত নাম ছেলেটার (বরের)।
[কথা শেষ হলো। স্কুলে দোতলায় উঠলাম। মাহিন আমাকে নিয়ে মজা করতিছে। গ্রামের ভাষায় ইয়াররি। ক্লাস শুরু হওয়ার আরো অনেক দেরি। তাই সব ছাত্র বারান্দায় আছি।]
মাহিন: কোন মাইয়ারে এটা! কামটাম করবি নাকি?
নাইম: তুই প্রেম করতে পারিস না বিধায় অন্য কেহ করবেনা!
তুফান: আরে বোন, ওহ সরি ব্রাদার বুঝার চেষ্টা কর। আমি আমার এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে কথা বল্লাম।
মাহিন: একটা কলা (সিগারেট) খাওয়াইতে হবে, তাইলে কাউকে বলব না।
মাইদুল: মাহিন তুই ভাল হইলিনা, মানুষের কাছে সব সময় টাকা থাকে রে!
তুফান: আচ্ছা দুটি সিগারেট (কলা) চারজন খেতে পারব? আগে একটি সিগারেট ছজন টানতাম।
[স্কুলগেটের সামনে দুটি ছেলে আমরা ফল নিয়ে 'আমরা-আমরা' করছে/হাক দিচ্ছে। জোবাইদের ছোটভাই জাহিদের হাতে কাঠের স্কেল। জাহিদ তাদেরকে বলছে,"তোদের হাতে ছুরি আছে বলে (তাই) 'আমরা আমরা' কয়া ভয় দেখাস। আমার হাতে কিন্তু স্কেল আছে, পিটুনি দিয়া 'তোমরা তোমরা' বানাই দিমু।" আমি জাহিদকে বললাম,"এ কিয়া বলতা হে! তুইতো মাহিনের চেয়েও অধিক বুদ্ধিমান। 'আমরা' ফলকে 'তোমরা' বানাই দিলি। আমরা শালমারা সবজি হাটের ওখানে গেলাম সিগারেট কিনে।]
তুফান: আমার ব্যাগটা একটু এনে দিতে পারবি! পালাব। মতলিবুর স্যারতো আমায় এখন ছুটি দিবে না।
মাইদুল: বাড়িতে যাওয়া লাগবে কেন?
তুফান: এখনি পায়রাবন্দে গিয়ে রেডি হয়ে গাইবান্ধা যেতে হবে।
নাইম: ওকে আমি ব্যাগ এনে দিচ্ছি।
[নাইম ব্যাগ এনেদিল। আমি পায়রাবন্দে যাওয়ার পথে বায়জিদকে কল করলাম। বায়জিদের কাছে টাকা হাওলাত/ধার চাইলাম, সে বলল এখন নাই বিকালে দিব। রেডি হয়ে পীরগাছা গেলাম, হাত টান বিধায় ট্রেন দিয়ে যাব। স্টেশনে ট্রেন আসিল, যাত্রীরা নামা-উঠা করতিছে। আমিও গাড়ীতে উঠলাম। স্পেশাল ট্রেন দিয়ে বেশিক্ষণ লাগল না পৌঁছাতে, লোকালের তুুলনায়। বোনারপাড়া পৌঁছে শাহজাহানকে কল করলাম।]
শাহজাহান: কইরে তুই?
তুফান: বোনারপাড়াত।
শাহজাহান: আমরাও ওখানে। রাকিব নামের এক বড় ভাই সহ আলছি (এসেছি) মার্কেটে। এখানে আয়, শহিদুল ও রহমান আছে।
[মার্কেটে গিয়ে দেখি তাদের সাথে একটি ছেলে ও একটি মেয়েও রয়েছে। ছেলেটার নাম বুজি রাকিব। আমি ভাবলাম বিয়ে খেতে যাবে তাই বোধহয় শপিং করছে, নয়তো রাকিবের বিয়ে। বরের পোশাক কিনতেছে না বরং কনের পোশাক কিনতেছে, মেয়েদের শপিং করতে যা লাগে আরকি। মাঝেমধ্যে আমাকেও বলতিছে দেখতো কোনটা সুন্দর, কোনটা দিয়ে সাজ ভাল হবে। বিল যা হচ্ছে সবাই ভাগাভাগি করে পরিশোধ করছে, আমিও সেই ভাগাভাগির মধ্যে। বিকাল হয়ে আসিল তাই আমরা সবে ভরতখালীতে রওনা দিলাম। শাহজাহান ও রহমান ভরতখালী হাটে নামল এবং আমি ও শহিদুল উল্যাবাঁধে আসলাম। দেখতেছি শহিদুলের মুখে রহস্যের ছাপ।]
তুফান: কি হয়েছে?
শহিদুল: তোমার কিছু হবে! আমার কিছু হয়নি।
তুফান: ক্লান্তি থাকলে রেস্ট নেও, তাতে আমার কী হবে।
[আমার দাদি আমাকে ডাকতিছে। ভাত খাইতে বলল, আমি বললাম পরে খাব। শহিদুল আর আমি গান ♪ শুনতেছি,হেঁটে হেঁটে উল্যায় আসতেছি ও গল্প করতেছি।]
তুফান: আচ্ছা তোমরা থাকতে আমার আসা লাগবে কেন?
শহিদুল: তোমায় ছাড়া যে কোন কাজ হবেনা।
তুফান: এই এলাকায় আমি আসতে চাইনা, তোমাদের কথায় আসলাম।
শহিদুল: কেন আসতে চাও না!
তুফান: না কিছু না, এমনিতেই।
শহিদুল: প্রেম বিষয়ক।
তুফান: আমি একটি মানুষকে কোকিল ভাবতাম, বেইমান পাখি কলিজা কেটে খাইছে আমার।
শহিদুল: সে যদি তোমার কাছে ফিরে আসতে চায় তাহলে তুৃমি কি করবে?
তুফান: এসব নিয়ে কথা বলিও না মাইয়াগো প্রতি আমার রুচি হারাইছে। তুমি চর থেকে কবে আইছো?
শহিদুল: ভালবাসার মানুষকে কী কেউ ভুলতে পারে! গত একদিন আগে, এসে পড়েছি এক ভেজালে মিলনের জন্যি।
[শহিদুলের কাছে জানতে পারলাম সেই ছেলেটির নাম রাকিব। ভ্যানে করে ভরতখালীতে আসলাম রহমানদের ম্যাসে। আমি ভাবলাম রাকিবও বুজি এই ম্যাসে থাকে।]
তুফান: সন্ধ্যা হচ্ছে প্রায়! বিয়ে খেতে কখন যাব;
রহমান: ভাই একটা কথা বলতে চাই মন খারাপ করিস না! এক তরফা অনুষ্ঠান তাই সেটা একটু ছোট হবে। তবে বিশাল আনন্দ হবে।
তুফান: এই কথার জন্যি মন খারাপ করব?
রহমান: তোমার টাকা যখম হবে তখন তুমি চাইলে বড় করে আয়োজন করতে পারো।
তুফান: তুমি বিয়ে করতিছো? আমার গাড়ি ভাড়ায় শট (কম)। বুঝলামনা উনাদের বিয়ে নিয়ে আমার সম্পর্ক কী।
[রহমান ভয়/আতঙ্কে, তার মুখটা লাল বর্ণের হয়েছে। আমি বললাম, ভয়ের কী আছে তোমার বয়স হয়েছে তাই বিয়ে করতিছো। যাক আমি বন্ধু হিসাবে তোমাদেরকে একদিন ট্রিট দিবানি।' আমাদের কথার মাঝে রাকিব বলে উঠল,"বিয়েটা আপনি করতিছেন।"]
তুফান: হ রহমানের শালীরে বিয়ে করমু।
রহমান: তুফান উনি মেয়ের ভাই।
তুফান: ওহ তাহলে আমাগো বিয়াই। তা কর বিয়া।
রহমান: করমুতো কদিন দেরি আছে, আগে তুমি কর।
তুফান: তাহলে আমায় কথা বলার জন্য রংপুর থেকে আনলে। ভিডিও কল দিলেই ত আমাকে দেখতে ও কথা বলতে পারতে।
[রাকিব অবাক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে।]
রাকিব: রূমে কাপড় আছে যান কাপড় পরে রেডি হয়ে নিন। শুভ কাজে দেরি করতে নেই।
তুফান: আমিতো রেডিই আছি। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে বর-বউকে দোয়া করমু এই ত।
রাকিব: আর্চয্য তো, শাহজাহান কি আপনাকে কিছু বলেনি?
তুফান: ও বলল ওর কার যেন আজ বিয়ে। তাই বিয়ে খেতে আমাকেও ডাকল। তাহলে কি শাহজাহানের বিয়ে।
[রহমান এই আলাপনের মধ্যে আমাকে বলল,"তোমার লগে কণিকার বিয়া।" আমি বলল,"ইয়ারকি বাদ দেও। এত বিভ্রান্তি করছো কেন! কীসের সারপ্রাইজ?" প্রথমেই শহিদুলের ইঙ্গিতে বুঝলাম ভেজাল আছে, কিন্তু কী ভেজাল সেটাই বুঝে উঠতে পারছিনা। কেননা চিন্তাধারা অন্য রকম।]
শাহজাহান: বিয়েটা তুই করতাছোস, যারে ভালবাসছিলি।
তুফান: কারে ভালবাসছিলাম! তোর বোন রে?
রাকিব: কণিকা
তুফান: রহমান আমি কিন্তু এখনে রংপুর চলে যাব। আমার মাথা গরম হচ্ছে।
[আমার চোখ লাল হয়ে গেছে। দেখলাম ম্যাসের বাহিরে মিলনের ছায়া। মিলনকে শহিদুল কল করে বলতিছে এখন আসিস না। আমি একা একা টিউবওয়েলে গেলাম হাত-মুখ ধুইতে। ধোয়ার পরে রশিদ ভাইকে টেক্সট করতেছি।]
তুফান: তুই যেয়ে মেয়েটার বিয়ে খেতে গেছিস, যাবি তার নাম কি কণিকা?
রশিদ: হুম, কীরে তুই নাম জানলি কীভাবে।
তুফান: আমি ভরতখালী আছি, এখানে এসে ইট দিয়ে আমার মাথায় বারি (আঘাত) দিতো।
[শাহজাহান আমার কাছে ভয়ে ভয়ে এসে মাথার চুল বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি তাকে বলছি,"তুই বিয়ে কর নয়তো আমায় বিষ এনে দে।" সে বলল,"মোক মাফ করি দে বন্ধু! তুই চাইলে আমাক মারেক, কাটেক তবু কিছু বলব না। তবু তুই বিপদটা থেকে উদ্ধার কর। রাকিব আমি কাছে আসিল।]
রাকিব: ভাই আসলে আপনার বন্ধুদের কোন দোষ নেই। এখানে দোষেরও কিছু নেই। আমরাই ভুল করেছি তবে আপনিও এই ভুলের ভাগিদার।
তুফান: আমি কি করেছি হা, আপনারাই মনকে ভাঙ্গবেন আবার আপনারই টেপ নিয়ে আসবেন জোরা দিতে। এত ঝালাই ত ভাল লাগেনা।
রাকিব: ভাই কথাটি একটু বুঝুন।
তুফান: আমি কি বুঝব? আপনার বোনকে বিয়ে করতে হবে এটাই বুঝতে হবে।
রাকিব: বিষয়টি না শুনলে বুঝবেন কীভাবে। আপনি কণিকার সাথে প্রেম করেছিলেন এটা প্রথমে আমরাও জানিনাই। তবে আমরা বুঝতে পারছিলাম সে কাউকে ভালবাসে। আমরা মাঝেমধ্যে দেখেছিলাম সে কার সাথে যেন কথা বলে। তার বোন এসব জানে। তাকে নিয়ে কেউ কেউ কটু/অমার্জনীয় কথাও বলেছে। যখন প্রেম করেন, তখন কদিনের জন্য সে অসুস্থ ছিল কিন্তু কি কারণ সেটা আপনি জানেন। সে ফাপর করেছিল। আমরা ভয়ে পড়েছিলাম যদি বড় কোন সমস্যা হয়, এমনটা। ইসলামের দিক থেকে তার যেহেতু বয়স হয়েছে তাই আমরা তার বিয়ে দিতে চাই। তার বিয়ের জন্য অনেক ছেলেকে দেখানো হয়েছে কিন্তু সে একটি একটি ছেলেকেও পছন্দ/চয়েস করেনি। আপনাকে সে মন থেকে ভালবাসত। আপনি তাকে বলেছিলেন 'তোমার অপেক্ষায় থাকব' অতচ সে আপনার অপেক্ষায় রয়েছে। আপনাদের গ্রামের আবিদ আমাদের ওখানে মাঝেমধ্যে যাইত/যায়, আপনি কণিকাকে বলছিলেন যেন আবিদের সাথে কথা না বলে। আপনি রংপুরে থাকাকালীন আপনার সম্পর্কে সে আবিদকে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু আমাদের ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। আপনাদের পালাক্রমে সম্পর্ক নিভে যাওয়া সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিনা। আমরা তার জন্য পাত্র দেখাই বিধায় সে মাঝেমধ্যে আত্মহত্যা করতে চাইছিল। আমরা তাকে অনেক বুঝাইছি কিন্তু সে বুঝতে চায়নি। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কি কাউকে ভালবাসো? সে বলেছিল,"হুম, আরএম তুফানকে ভালবাসি।"
"সেই তুফানের বাড়ি কোথায়?"
সে বলেছিল,"উল্যা বাজারের আবিদ তাকে চিনে।"
আমরা আবিদের কাছে আপনার সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেছি। আবিদ ভাবছিলো আপনি কোন অকাম করছিলেন বুজি তাই খুঁজে বেড়াচ্ছি, তার কাছে আমরা আপনার একটা ফটো পাই। সে দিতে চাইছিল না, আমাদের এত পারাপারি/অদৃশ্য অনুরোধের জন্য দিয়েছে। বর্তমানে কণিকা আল্লাহর রহমে সুস্থ আছে। আমরা ত ফুলছড়িতে যাই, আপনার ছবিটা দেখে আমার কাছে কেন জানি মনে হয়েছে আপনাকে আমি কোথাও দেখেছি। একদিন আমি ফুলছড়িতে যাচ্ছি ভ্যানে করে, ভ্যানে একটি কিন্ডারগার্টেনের ছাত্র ছিল। আমি দেখেছি আপনি ছেলেটার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন। আপনাদের কথা শেষ হলে আমি ছেলেটার কাছ থেকে আপনার সম্পর্কে জানতে চেয়েছি, ছেলেটার নাম মিলন। তারপর থেকে আপনার এই বন্ধুদের সাথে পরিচয়। কণিকার মুখে শুনছিলাম আপনি
'এমএম কিন্ডারগার্টেন স্কুল' এ পড়েছেন। তাতে করে শিওর হতে পেরেছি। কিছু মাস থেকে কণিকার সাথে আপনার সম্পর্ক নিরব, তাই আপনাকে আমরা কল দেইনি কেননা আপনি যদি বিরক্ত হন/কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা বিষয়টা এমন না। তাই আপনার বন্ধুদের মাধ্যমে যোগাযোগ। মিলন আমাদেরকে শাহজাহানের সাথে পরিচয়তা রাখতে বলেছে। আপনার বন্ধুদেরকে সব কথা খুলে বলি। মেয়েটা বলেছিল, আপনি অভিমান করে আছেন। আপনার বন্ধুদেরকে বলেছিলাম আপনাকে ডেকে আনতে, সবার মাঝেই একটা মায়া থাকে কেননা তারাও কোন বোনের ভাই। এখন আপনিই মেয়েটিকে আত্মহত্যা থেকে ফিরে আনতে পারেন। এখানে একটি প্রাণের বিষয়, তবে আপনি চাইলে ঝামেলা করব না।'
রহমান: আত্মহত্যা বিষয়টি একটু অনুভব করে দেখ।
তুফান: মেয়েদের যদি ১৭-১৮ বয়স হয় তাহলে সে বিয়ের উপযুক্ত। আর ছেলেদের ২১ হওয়া চাই।
রহমান: ভালবাসা বয়স কিংবা বংশ মানে না।
তুফান: হ হামার বাড়ির আদালতে জানলে মোর মৃত্যুদন্ড। হামার ভাই-এ বিয়ে করছে ২৪ বৎসর থাকাকালীন।
শহিদুল: আরে মিয়া ভয় করলে জয় হবে কীভাবে!
তুফান: উল্যায় যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন বলোনি কেন?
শহিদুল: হ তখন জেদি তুফানকে বলে পাগলা ঘোড়ার দৌড় খাই।
তুফান: তুমি করলেনা কেন!
শহিদুল: করমু, আব্দুর রহমান করছে ত।
তুফান: রাজন রহমান?
রহমান: আরে মুই নম (নই)
রাকিব: আপনি আবিদকে নিয়ে চিন্তা করবেন না, আবিদ এর গন্ধ পায়নি।
তুফান: আমি বেকার তারে খাওয়ামু কী, রাখমু কই?
রাকিব: সে আপাদত আমাদের এখানে থাকবে।
তুফান: আপনি কণিকার বড় তাহলে আমাকে 'আপনি' করে বলছেন যে।
রাকিব: ঠিক আছে, এখন থেকে তুমি আমি।
[মন থেকে ভেসে উঠল: বিশুদ্ধতা রাশি রাশি'। ভাবছি আজকে বিয়ে কিন্তু প্রথম রাতে বউকে কোথায় রাখব, বন্ধুর কাছে টাকা ধার নিয়েছি লজ্জাও লাগছে। আজকে বাঁধে আসলাম কিন্তু বাঁধে আজকে না গেলে সবাই ভুলই বুঝে নাকি। সন্ধ্যা হয়ে আসল, আর একটু পরে রাত।]
রহমান: বউকে আজকে আমাদের ম্যাসে আনবে, আমি সে ব্যবস্থা করেছি। আমি, শাহজাহান ও শহিদুল অন্য রূমে থাকব। তবে বাড়িতে অতিদূত জানাতে হবে, বউ স্বামীর বাড়িতেই শোভা পায়।
শাহজাহান: বেশি লোককে আমন্ত্রণ করা হয়নি শুধু বন্ধু-বান্ধব ও কিছু আত্মীয়-স্বজন।
তুফান: আমার মাথা ব্যথা করছে।
শাহজাহান: আয় এখান মালিশ করে দেই, পরে ভাবির কাছে মালিশ করে নেইস।
তুফান: মোর দুধের দাঁতই পড়েনি আর আজকে মোর বিয়ে। তোর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি রংপুরে যাব না।
[এতক্ষণে রাকিব বাজারে গিয়েছিল এখন আসিল। শহিদুল আমার চাচিকে কল করে বলল, আজকে আমাদের বাড়িতে আয়োজন তাই তুফান আজ যেতে পারবেনা।' রাত ছোট দিন বড়। কথা বলা শেষ হবার পরে রওনা দিলাম কণিকার বাড়ির উদ্দেশ্যে। তাদের গ্রামে ছেলেমেয়েরা বলাবলি করছে বর এসেছে কিন্তু তারা আমায় চিনতে পারছেনা। আমিও পাঞ্জাবি পড়েছি, রহমানও পড়েছে। রহমান একটু লম্বা তাই তারা মনে করতিছে লম্বা ছেলেটির বুজি বিয়ে। ফিতে যখন কাটতে যাব তখন শালা-শালীরা রহমানকে বলতিছে,"দুলাভাই শালা-শালীদেরকে আগে খুঁশি করানো লাগবে নইলে ফিতা কাটা নিষেধ।" আমি রহমানকে চুপিচুপি বলতেছি,"তুমি বর, অতচ মুখে রুমাল নাই! বিয়েটা তোমার সাথে সুন্দর মানায়।" সে একটু হাসি দিল। আমার রুমাল তাদের চোখেই পড়ছে না, তারা মনে করছে আমরা দুষ্টুমি/ফান করছি। ৫ মিনিট পর রাকিব এসে তাদেরকে বলছে,"তোমারা কারে বিয়াই ভাবছো?" রহমান একটু হাসি দিল। একটি ছেলে বলল উঠল,"মানে?"]
রাকিব: যারে দুলাভাই বললা তিনি দুলাভাইয়ের বন্ধু।
[সবাই অবাক হয়ে হৈচৈ করে গেট ফাঁকা করল, ফায়ে ফায়ে (টাকা ছাড়া) আমরা ভিতরে গেলাম। লাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে রশিদ ভাই আর সাজু মিয়া কয়েকটা ছেলের সাথে দাঁড় হয়ে আছে। বিয়ে করতে এসে এ কেমন বিপদে পড়লাম। রশিদ ভাই আমায় ইশারা করে ডাকছে, এখন কেমনে যাই। রহমানকে চুপিচুপি বললাম,"রশিদ ভাইয়ের মোবাইল নম্বরে এসএমএস দিয়ে এখানে ডাকো"। রশিদ ভাই এসেই একটু হাসলো। আমরা ঘরে ঢুকলাম।]
রশিদ (চুপিচুপি): তুই এখানে আসাও ছাড়লি না, তুই নাকি এলাকা চিনিস না!
তুফান (চুপিচুপি): আগে আইছিলাম এখানে রাসেল ব্যাপারীর সাথে। আজকের কোন বিষয় বাড়িতে বলবিনা, বন্ধুর অনুরোধে দাওয়াত খাইতে আসলাম।
[রশিদ ভাই আমাদের ঘনিষ্ঠ। তাই তাকে নিয়ে টেনশন করা ছেড়ে দিলাম। আমাদের কথার মাঝেই শালীরা শরবত নিয়ে আইল। আমি খাইতে চাইনা তারাও ছাড়েনা। একটা গ্লাস হাতে দিল, আমি এক চুমুক দিয়ে রশিদ ভাইকে খেতে দিলাম। ভাইয়ের বিয়েতে গেছলাম সেই অভিজ্ঞতায়। রশিদ ভাই শরবত খেয়ে শোসাইতেছে, ঝাল। শালীরা রশিদ ভাইকে দেখে হাসছে।]
শালীরা: আপনি বউপক্ষের হয়ে বরের শরবত খাইছেন এখন ঠেলা সামলান।
[রহমানেরাও শরবত খেল। এর মধ্যে শাহজাহানকে কে যেন জরিরঙ মাখিয়ে দিয়েছে। ফল খাওয়ার পরে শালীদেরকে কিছু টাকা দিলাম। কেউ কেউ অবাক হয়েগেছে 'এত ছোট ছেলের বিয়ে'। আয়োজনটা ছোট হলেও জাঁকজমক হয়েছে। খাটে বসে আছি, ফোনে রিংটোন হচ্ছে! ভাইয়া কল দিয়েছে। আমি ভাইয়াকে বললাম,"এসএমএস দে, নেটওয়ার্কের সমস্যা তাই আওয়াজ ঘ্যার ঘ্যার করছে।" তাই ভাইয়া এসএমএস দিল।]
ভাইয়া: কই তুই?
তুফান: বন্ধুর সাথে একটা অনুষ্ঠানে আছি।
ভাইয়া: কার বিয়ে রে? ফেসবুকে দেখলাম একজনে পোস্ট করেছে 'এটারে বলে ভালবাসা'।
তুফান: কেউ মনে হয় মজা করছে। আচ্ছা কালকে কথা হবে।
[অবশেষে বিয়েটা হলোই।]
কিছু কথা: আস্সালামু আলাইকুম। আশাকরি সবাই ভাল আছেন। এই নাটিকাটি কাল্পনিক গল্পে সাজানো হয়েছে। অসাধু মন নিয়ে কখনো নাটিকা লেখা সম্ভব না। আমি ছড়া, কবিতা, গান, অনু/রম্যগল্প, ছোটগল্প, গল্প, প্রবন্ধের পাশাপাশি নাটক-নাটিকা লেখি। আশা আছে কখনো সিনেমা লেখার। এখানে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষানীয় রাখা হয়েছে। শিরোনাম 'কোকিলের প্রেম সুর'। রচনার তারিখ ২৭/৭/২৪ইং। কোন অংশে ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমাদেরকে জানাবেন। এটা ভবিষ্যতে আরো মজাদার, সংশোধন ও সম্পাদনার প্রয়োজন থাকলে আমরা তা অঞ্চল ও বিশুদ্ধ ভাবে করতে চাই। দোয়া করবেন।
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: আহমেদ হোসাইন ছানু। উপদেষ্টা সম্পাদক: মোঃ রহমত আলী। উপদেষ্টা: মোঃ জাবেদুল ইসলাম। সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ রেজন মিয়া। কার্যালয়: উত্তর উল্যা, ভরতখালী, সাঘাটা, গাইবান্ধা, বাংলাদেশ। মোবাইল: 017013680087