• শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

ভোগেই নয়,মনের পশুত্বের বিসর্জন দিয়ে তাকওয়া অর্জনই কোরবানির উদ্দেশ্য

সাবিত রিজওয়ান / ৪০ Time View
Update : শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

মো: ওসমান হোসেন সাকিব

ইসলামের পাচঁটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম রুকন হলো হজ।আর এই পবিত্র হজের মাসেই আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পশু কোরবানির সাথে সাথে বান্দাগণ নিজের মনের পশুত্বকে বিসর্জন দেন।

যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়েছেন।যার মাধ্যমে বুঝা যেত,মহান আল্লাহর প্রতি ওনাঁদের ভক্তি,বিশ্বাস ও প্রেম কতটুকু তা।তেমনি নবি-রাসুলগণের মধ্যে আল্লাহ এক মাহবুব নবি ছিলেন-ওনাঁর নাম হয়রত ইবরাহিম (আ.)।মহান ধরার মালিক আল্লাহ তায়ালার মনে ইচ্ছা জাগল,আমি আমাঁর বন্ধু ইবরাহিমকে আজ পরীক্ষা নিব।সেই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা হয়রত হয়রত ইবরাহিম(আ.) স্বপ্ন দেখাল,”হে ইবরাহিম তুমি আমার জন্য তোমার প্রিয় জিনিসকে কোরবানি দাও।হঠাৎ করে তিঁনি এমন স্বপ্নে দ্বিধাদ্বন্ধ হয়ে পড়লেন।বিষয়টি তিঁনি তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী হযরত হাজেরা(আ.) জানাল।কোনোকিছুতে ঠিক করতে পারছিলেন না তাদেঁর কাছে প্রিয় জিনিস কি হতে পারে?অবশেষে,বুঝতে পারলেন তাদেঁর কাছে তাদেঁর জীবনের চাইতে ও একমাত্র পুত্র হয়রত ঈসমাইল (আ.) সবচেয়ে প্রিয়।তাই তাঁরা আল্লাহ সন্তুষ্টিতে প্রিয় জিনিস হিসাবে তাদেঁর একমাত্র পুত্র সন্তান হয়রত ঈসমাইল(আ.) কে কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মনে-প্রাণে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার ইচ্ছা নিয়ে আল্লাহর নির্দেশমত কোরবানি দেওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর আদেশকৃত স্থানে শিশুপুত্র ঈসমাইল (আ.) হাজির করলেন।নিয়মানুযায়ী যখনই হয়রত ঈসমাইল (আ.) গলা মোবারকের উপর ছুরি চালানো শুরু করলেন,ঠিক তখনই মহান রব আল্লাহ পক্ষ থেকে হয়রত ইবরাহিম(আ.) লক্ষ্যে গায়েবী আওয়াজ এলো,”হে ইবরাহিম(আ.)!তুঁমি থাম।তুঁমি আমার পরীক্ষায় পাশ করেছো।তোঁমাকে আর তোঁমার পুত্র ঈসমাইল(আ.) কে কোরবান দিতে হবে না। তাৎক্ষণিক আল্লাহ নির্দেশে জান্নাত থেকে এক দুম্ভা এসে শিশুপুত্র ঈসমাইল (আ.) বদলে কোরবানি হয়ে গেল।

তারই ম্মরণার্তে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে কোরবান কে ওয়াজিব করে দিয়েছেন।যখনই কোনো ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে,তার উপর কোরবান করা ওয়াজিব।এজন্য আমাদের কোরবান করতে হবে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য।দুনিয়াতে কারো বাহবা পাওয়ার জন্য,বড় পয়সাওয়ালা সাজার জন্য,মানুষের থেকে সম্মান পাওয়ার আশায় যদি কুরবানি করা হয়;তাহলে সেই কুরবানিতে আল্লাহ সন্তুষ্টি থাকবে না,নেকট্য অর্জন হবে না,তাকওয়াবান হওয়া যাবে না।নামের আশায় নিজের উপর কুরবানি ওয়াজিব না হওয়ার সত্ত্বেও যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে,কারো কাছ টাকা ধার নিয়ে কুরবানি করলে;সেই কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

আমাদের বরং উচিত,কুরবানিটা একমাত্র আল্লাহ তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্য করা।মওলার সান্নিধ্য লাভের আশায় হালাল উপার্জন থেকে কুরবানি করা উচিত।

আরও একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,কুরবানির পশুর যাবতীয় মাংসকে তিন ভাগে ভাগ করতে হবে।প্রথম ভাগ হলো আত্মীয়-স্বজনের জন্য একভাগ,দ্বিতীয় ভাগ হলো অসহায়,দুঃস্থ ও মিসকিনদের জন্য আর তৃতীয় ভাগ হলো নিজের জন্য।এর মধ্যে যদি আমরা কিঞ্চিৎ পরিমাণ ও হেরফের করি তাহলে আমাদের কোরবানি হবে না।

অতএব,আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করব কোরবানটা যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে উৎসর্গ করতে পারি।আল্লাহ গুণে গুণান্ধিত হয়ে নিজের মনের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারি।সবর্দা হালাল -হারাম পার্থক্য করে চলার চেষ্টা করব।

মনে থাকবে আল্লাহর ভয়,পশুর মাংস ভক্ষণ নয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক।

Facebook Comments Box


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
bdit.com.bd