মো: ওসমান হোসেন সাকিব
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ।সংবিধান মতে, কথাটি মিথ্যা নয়।নিয়ম অনুসারে,গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকটা নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে যেমন নায্য হিস্যা পাবে তেমনি রাজনীতির ক্ষেত্রেও যে যার আর্দশকে লালিত করে তার রাজনীতি চর্চা করবে এটাইতো,নাকি?
কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট দেখা মিলে অন্যরকমের।যে দল ক্ষমতায় থাকে,সে দলের নেতা-কর্মী মনে করে দেশটা শুধু তাদের।লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতির অন্ধজালে তারা এমনভাবে বিভোর হয়,মনে হয় দেশে শুধু রাজনীতি তারা করে।দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিরোধীদলীয় নেতৃ-বৃন্দের উপর সীমাহীন নির্যাতন চালিয়ে যান।আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি,এমন রাজনীতি চর্চা যারা করে তাদের থেকে দেশ যে কিছু পাবে তা আশা করা যায় না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চটা মুক্তচর্চার কেন্দ্র নয়।যেখানে আছে সুষ্ঠু মতামতের বদলে একতরফা মতামতের প্রাধান্য,সুষ্ঠু বিভাজনের বদলে ক্ষমতাসীন দলীয় নেতৃ-বৃন্দের মধ্যে বিভাজন,গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারের বদলে বাকশাল প্রয়োগ করে দলীয় মনোগ্রামধারী নির্বাচন প্রক্রিয়া,সুষ্ঠু বিচারনীতির বদলে দলীয় সরকারের হস্তক্ষেপে বিচার প্রক্রিয়া,সরকারি বিভাগসমূহে চাকরির বেলায় সবার সমান অধিকার না রেখে রাখা হয়েছে কোটা প্রক্রিয়া।যেমন পোষ্য কোটার কথা আসা যাক।বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে,ভিসি নিয়োগে,সরকারি প্রতিটি বিভাগে পৌষ্য কোটার আদলে পূর্বে কর্মরত চাকরিজীবী সন্তানদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।তাহলে বলুন তো,এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আপনি দেশের ও জনগণের কল্যাণ হবে এমন কিছু আশা করবেন কিভাবে?
এখন একটু আসি,রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিহিংসা রাজনীতির মনোভাব বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মনে কেমন?
রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা।কিন্তু বাংলাদেশে কি এমন রাজনীতির দেখা মিলে?
বাংলাদেশের রাজনীতির নেই কোনো স্বচ্ছতা,নেই কোনো জবাবদিহিতা,নেই কোনো সুচিন্তিত ধারণা যেটার দ্বারা দেশ ও জনণগের কল্যাণ সাধিত হবে।আছে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে এলাকার মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা,আছে এলাকার মধ্যে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের দমন ও নিপীড়নের মাধ্যমে প্রভাব খাটানো,আছে দলের পাশ ধরে লক্ষ-কোটি টাকা পাচার করা,দলের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে আসীন হয়ে শত শত কোটি টাকা দূর্নীতি করা,জগণ্য জগণ্য অপরাধ করার সত্ত্বেও দলের সুবিধা নিয়ে বিচারের রায় নিজের পক্ষে নেয়া সেই রাজনীতি।এমন রাজনীতি চর্চা ব্যক্তিরা কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি যে চর্চা হয় তা কি মুক্তমঞ্চে অনুশীলন হয়ে থাকে?চলুন একটু ইতিহাসকে সঙ্গ করে বিস্তারিত জানা যাক।বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি হতে হবে সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছ।কারণ,এই মঞ্চ থেকেই ভবিষ্যতের যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হওয়া সম্ভব।কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির বেলায় দেখা মিলে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতির চর্চা।ছাত্র রাজনীতির নামে দলীয় রাজনীতির চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হতে গিয়ে দেখা যায় বাম,ডান চিন্তাধারার ছাত্রদের ক্ষমতাসীন দলের পুষ্ট ছাত্র নেতাদের হাতে নির্যাতিত হতে হয়।বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই যদি একটু গবেষণা করে দেখি,বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতই চেষ্টা করুক না কেন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি করা ছাত্রদের হাতে অন্য মতাদর্শী ছাত্ররা অত্যাচারিত হয়ে আসছে।
গেস্টরুম টর্চার,হল ও সিট বাণিজ্য,ধর্ষণ,জোর করে দলীয় পোগ্রামে অংশগ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলোতে হস্তক্ষেপ করে ভিসিসহ,প্রফেসর নিয়োগে যোগ্য ও সুচিন্তিত গুণীজনদের দূরে রেখে নিজ মতের,নিজ আদর্শের ব্যক্তিদের বসানো ইত্যাদি।
এমন রাজনীতি চর্চাতে কোনোদিন দেশমাতার ভালো কিছু হবে বলে আমি মনে করি না।মুক্তমঞ্চে রাজনীতি বলতে এমন হওয়া চাই যেথায় দেশের উন্নয়ন সর্বাগ্রে থাকবে।থাকবে না বিরোধীদল দমন ও নিপীড়ন,ছাত্র রাজনীতির নামে কলুষিত চিন্তাধারা।
এমন একটা পরিবেশ চাই,যেথায় সবাই নিজ নিজ আদর্শে রাজনীতি করবে কিন্তু স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়।থাকবে না লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অপছায়া,থাকবে না দলীয় রাজনীতির হস্তক্ষেপ।সবাই সবার সুচিন্তা প্রয়োগ ঘটাবে দেশের কল্যাণে।দেশের তরে দল,মতকে পিছনে রেখে জ্ঞাণী-গুণী ব্যক্তিবর্গের সমাহার ঘটিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে উন্নতির পথে।
সুস্থ,মননশীল ও কল্যাণমুখী চিন্তা-চেতনা ছাড়া দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরি হবে না।যেটার জন্য আমার প্রত্যাশিত মুক্তমঞ্চে রাজনৈতিক চর্চা অপরিহার্য।
লেখক:_কলামিষ্ট ও গবেষক।
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: আহমেদ হোসাইন ছানু। উপদেষ্টা সম্পাদক: মোঃ রহমত আলী। উপদেষ্টা: মোঃ জাবেদুল ইসলাম। সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ রেজন মিয়া। কার্যালয়: উত্তর উল্যা, ভরতখালী, সাঘাটা, গাইবান্ধা, বাংলাদেশ। মোবাইল: 017013680087