ডক্টর মোঃ বদরুল আলম সোহাগ
বিশ্ববাসীর আতঙ্ক ও উদ্বেগের মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন সামরিক বাহিনী বোমা হামলা চালিয়েছে। শনিবার (২২ জুলাই) ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় রাত আটটার কিছু আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প এই হামলার কথা জানান।
ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান। সব উড়োজাহাজ এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।”
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের জটিল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই বিশ্বজুড়ে নেতৃবৃন্দ ও বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন, এই হামলা ছিল অপ্ররোচিত এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়িয়ে দেবে এবং পরোক্ষে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
সমালোচকদের মতে, ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ‘ইসরায়েল-পক্ষপাতমূলক’ অবস্থান এবং মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসী নীতি বাস্তবায়নের প্রবণতাই এই সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করেছে। অনেকেই বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন হুমকি’র দোহাই দিয়ে ট্রাম্প একতরফা হামলা চালিয়ে কেবল নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছেন।
ট্রাম্পের মানসিক ভারসাম্য ও নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ:
বহু বিশ্লেষকই ট্রাম্পের মানসিক স্থিতি ও নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “ট্রাম্পের এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।”
মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্প বহুদিন ধরেই বিভাজনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। নিজ দল রিপাবলিকানের অনেক সদস্যও তাঁর এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
জাতিসংঘের জরুরি বৈঠক, শান্তির আহ্বান
ইরানের পক্ষ থেকে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিশোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ এড়াতে শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ব আজ এক উত্তাল ও অনিশ্চিত সময়ের মুখোমুখি। এমন সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে অনেকেই দেখছেন কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অপকৌশল এবং বিপজ্জনক এক জুয়া হিসেবে। মানবতা ও বিশ্বশান্তির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব পক্ষকে এখনই সংযম এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে।