ছালিম আহমদ খান
বর্তমানে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এক জটিল ও সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা—সবকিছুতেই এক ধরনের অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এই প্রেক্ষাপটে যখন জাতির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে অবস্থান নিচ্ছে, তখন আমাদের মতো সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অবস্থানে দাঁড়িয়ে।
আমরা রাস্তায় নামিনি। আমরা স্লোগান তুলিনি। কারণ, আমাদের লক্ষ্য দাবি নয়—দেশের প্রতি দায়িত্ব। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় সংকটময় মুহূর্তে আন্দোলনের চেয়ে বড় প্রয়োজন সংযম, সংহতি এবং সহমর্মিতা।
একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে—আমরা কি দাবি তুলতে পারি না?
অবশ্যই পারি। কারণ দেশে এখনো অসংখ্য সমস্যা বিরাজ করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি, স্বাস্থ্যসেবার অভাবে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজারো পরিবার। আর এসব সংকটে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা, যাদের অধিকাংশ সময় রাষ্ট্র বা সমাজের দৃষ্টিসীমার বাইরেই থেকে যেতে হয়।
স্বেচ্ছাসেবীরা এদেশের নীরব যোদ্ধা—তাঁরা কোনো প্রতিদান চায় না, কোনো প্রচার চায় না। তাঁরা শুধু চান, একটি নিরাপদ, মানবিক ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ। অথচ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যায়, তারাই সমাজে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। স্বীকৃতি নেই, সম্মান নেই, অনেক সময় সহানুভূতিও নেই।
আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দাবি হওয়া উচিত শান্তির দাবি। দেশকে সংঘাতের দিকে নয়, সংলাপের পথে নিয়ে যাওয়া জরুরি। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেই সম্ভব হবে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র নির্মাণ।
আমাদের এই অবস্থান কোনো দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং এটি একটি সচেতন, মানবিক এবং রাষ্ট্রকেন্দ্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
আমরা রাজনীতি করি না, বরং নীতির রাজনীতি চাই।
আমরা বিতর্কে যাব না, বরং সেবার মাধ্যমে সমাজকে জয় করতে চাই।
আমি বিশ্বাস করি, যদি দেশ গঠনমূলক সংস্কারের পথে অগ্রসর হয়, তবে অবশ্যই স্বেচ্ছাসেবীদের অবদান যথাযথ মূল্যায়ন পাবে, ইনশাআল্লাহ। কারণ একটি দেশের প্রকৃত শক্তি তার নীরব সেবক শ্রেণি—যারা কাজ করে যায় নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থে।
আজকের এই ক্রান্তিকালে আমরা সবাইকে অনুরোধ জানাই—আসুন, দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হই। হিংসা নয়, হোক সহনশীলতা। দাবি নয়, হোক দায়িত্ববোধ। দেশকে ভালোবাসি—এই বোধ থেকেই গড়ে উঠুক এক নতুন ভোরের বাংলাদেশ।
লেখক:
হাফিজ মাও: মোঃ ছালিম আহমদ খান
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক
হাফিজ সোসিয়াল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।