সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা। প্রকৃতিট কেমন যেনো গুমট মেরে আছে। এই বুঝি নামবে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। বড়ো দাদা বারান্দায় বসে সিগারেট ধরে দোলনা চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছেন। দিয়াশলাই টা ডান হাতে। মাঝে মাঝে গুনগুনিয়ে সুর তুলছেন আর ছাড়ছেন। কোনটাই যেনো মনপুত হচ্ছে না।
সাদা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরেছেন প্রতিদিনের মতো। মাথায় গুছানো লম্বা সাদা চুল, লম্বা সাদা দাড়ি, গোঁফের চুলগুলো ধীরে লম্বা হয়ে ধনুকের মতো বাঁকানো। সবমিলিয়ে অসাধারণ লাগছে। কিন্তু কেন যেনো মনটা তার প্রকৃতির মতো গুমট মেরে আছে। কাউকে কিছু বলছেও না।
আশেপাশের সবাই যারযার কাজে ব্যস্ত। কেউ দাদার দিকে তাকানোর সাহস রাখে না। কারণ কখন কোন খুঁত ধরে বসে। কাউকে ডাকলে অনুগত শিষ্যের মতো এসে সাড়া দেয়। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম চোখের দিকে। অবাক না হয়ে উপায় নেই। এগিয়ে গেলাম দাদার কাছে। কি বলবো ভাবছি। অমন শৌর্যশালী, প্রতাপ ধারী সুপুরুষ দাদার গণ্ড বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পড়ছে।
কিছু না বলে পকেট থেকে টিসু বেড় করে মুছে দিলাম চোখের জল। অমনি আমাকে ঝড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন। পরেই সিগারেট টা ফেলে দিয়ে পাশে বসালেন। আবার কাছে টেনে কপালে চুমু দিলেন। পরে বললেন,
: দাদুভাই, আজ তোর দাদীর কথা বড্ড মন পড়ছে। কিছুতেই ভুলতে পরছিনা। হয়তো খুব শীগ্রই দেখা হবে তার সাথে।
একটু পরেই আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালেন এবং আমাকে তাঁর চেয়ারে বসতে বললেন। দাদার আকষ্মিক এই আচরণে আমার চোখ পানিতে ছেয়ে গেলো। দাদা-ই নিজহাতে মুছে দিলেন এবং তাঁর চেয়ারে আমাকে বসিয়ে দিলেন। কয়েক মুহূর্ত একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং মুচকি হেসে ধীরে হেঁটে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন।