• মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

ছোটগল্প: ধর্ম কর্মহীন হোজ্জা

Reporter Name / ৫৯ Time View
Update : শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫

গল্পকার: সালমা আক্তার চাঁদনী

গ্রামের মাতব্বর হোজ্জা নাম এর এক লোক। চারদিকে তার প্রশংসার গুনজন।

গ্রামের বড় পুকুর পাড়ের সুপারি বাগান ও নারকেল বাগান থেকে হোজ্জা সবসময় গরীব অসহায় মানুষ কে দান করে।

আরেকটি বড় আম ও লিচু বাগান আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে রেখেছে।
এটা প্রতি বছর গ্রামের শেষের দিকে এতিমখানায় দান করে।

প্রতি বছর ধানের জমিতে বিপুল পরিমাণ ফসল ফলে।
বস্তায় বস্তায় তা মসজিদের জন্য দান করে।

তার দানের হাত প্রসারিত হয়েছে সেই অনেক আগ থেকেই।
আমি ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি।
এসব কথা বলছিলেন নামাজ পড়ে বের হয়ে আলতাফ সাহেব।
তিনি তার বিদেশ ফেরা বন্ধু ইসমাইল কে হোজ্জার সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা দিলেন।

আলতাফ সাহেব ভাবছেন বিদেশ ফেরত বন্ধুকে এসব কথা বললে তার মন নরম হবে। আর সেই সুবাদে সেও আমাকে কিছু দান করবে। আমি গরিব মানুষ সেতো এতটুকু উপকার করবেই।

বন্ধু ইসমাইল আলতাফ সাহেব এর কাছে হোজ্জার এত এত প্রশংসা শুনে তাকে দেখার খুব ইচ্ছে জাগছে মনে। মনে মনে ভাবছে তাকে সময় করে দেখে আসা যাক।

রাতের বেলা ইসমাইল বন্ধু আলতাফ এর বাসায় গেলো। সাথে নিয়ে গেলো কিছু সৎ উপদেশ এবং মানুষ কে ঠকানোর চিন্তা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসার গল্প।

ইসমাইল আলতাফ সাহেব এর উঠানে গিয়ে ডাক দিলেন। আলতাফ সাহেব ঘর থেকে হারিকেন হাতে বের হলেন। গরীব মানুষ বলে এখনো হারিকেন জ্বালাতে হয়।

আলতাফ সাহেব ভাবছেন এত রাতে বন্ধু কেনো আমার বাড়িতে। নিশ্চয়ই আমাকে কিছু দিতে আসছে।
ব্যস্ত হওয়ার ভঙ্গিতে বললো বন্ধু এত রাতে কেনো দিনে আসতে।

তোমাকে অসুবিধায় ফেলছি মনে হয় বললেন ইসমাইল সাহেব।

না না বন্ধু তা হবে কেনো?
তোমাকে কি যে খাওয়াই এখন।
এ বলে বসতে দিলো বারান্দায়। হারিকেন এর আলোতে বুঝা যায় বন্ধুর হাতে এটা কিসের বই। তবুও জিগ্যেস করে বসলো বন্ধু এত রাতে বই নিয়ে ঘুরছো কেনো?

ইসমাঈল সাহেব এ অপেক্ষায় ছিলেন।
বললেন আসলে বিদেশ থেকে আসার সময় তোমার জন্য এটা হাদিয়া নিয়ে আসলাম। তোমাকে এটি দান করবো বলে। আলতাফ সাহেব মুখে কিছু না বললেও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলছে কেনো এত কষ্ট করতে গেলে বলো? আমাদের বন্ধুত্বই তো আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
বিচক্ষণ ইসমাইল তার মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন।

বললেন আরে রাখো এ বইটি আমি নিলাম এ জন্য যে এতে দান করার নমুনা ও আমল নিয়ে লেখা আছে।

এ বলে তিনি বের হয়ে গেলেন।
পরদিন ফজরের নামাজ পড়ে ইসমাইল সাহেব আলতাফ সাহেব কে বলছেন তোমার দান করা সেই হোজ্জা কোথায় তার সাথে একটু আলাপ করি।

আলতাফ সাহেব বলছেন এ কি বলছো বন্ধু তিনি সকাল দশটায় ঘুম থেকে ওঠে। তিনি তো আর আমাদের মতো ফকির নয়। কথাটা ইসমাইল কে খোঁচা মেরে বলছেন তা অবশ্য বুঝতে পারছেন। তবুও বললেন ওহ তো বড়লোক বলে মসজিদে আসেনা তাই তো।?

আলতাফ সাহেব বললেন হু।
তাহলে ঠিক আছে দিন দশটায় যাবো এত মহান ব্যক্তি কে দেখতে তুমি নিয়ে যাবেতো।?

আলতাফ সাহেব বলছেন ঠিক আছে। তাহলে এখন যাই।
ইসমাইল সাহেব সকাল দশটায় রওয়ানা দিলেন হোজ্জা কে তো দেখতেই হবে।

গ্রামের মধ্যস্থলে বড় একটি টিনের ঘর ভেতর বাড়ি বাহির বাড়ি।
হোজ্জা বাড়ি থেকে বের হয়ে বাহির বাড়িতে এসেছে।

লাইনে ১৫- ২০ জন লোক দাড়িয়ে আছে। হোজ্জা চেয়ারে বসা। সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলছে এবারের ফসলের সময় সুদের হার বাড়িয়ে দিতে হবে। না হয় আমি টাকা দিতে পারবো না। সবাই অসহায় হয়ে একে অন্য জনের দিকে তাকালো। একজন বললো সাহেব বাড়িয়ে দিলে আমরা খাবো কি?

চুপ কর হারামজাদা না হয় কোন টাকাই দেবোনা যা ভাগ। লোকটি হোজ্জার পায়ে ধরে বললো ঠিক আছে তাই হবে তবে আপাতত দিন টাকা।

সবাই কে বিদায় করে হোজ্জা ঘরে ফিরবে এসময় উপস্থিত হলেন আলতাফ ও ইসমাইল সাহেব।

ইসমাইল সাহেব তার সমস্ত কার্যকলাপ দেখলেন দূর থেকে। সালাম দিয়ে খবরাখবর নিয়ে রওয়ানা হলেন।

রাস্তায় এসে বন্ধু কে বলছে যে সুদ খায় নামাজ পড়ে না তার দান কি আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য?
একথা শুনে আলতাফ সাহেব বলছেন সুদতো এখন সবাই খায় সমস্যা কি?

ইসমাঈল সাহেব তাকে সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে বললেম। কবরে শাস্তির কথা বললেন। তারপর লজ্জিত ভঙ্গিতে আলতাফ সাহেব বললেন আসলে বন্ধু আমি বুঝতে পারিনি।

Facebook Comments Box


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
bdit.com.bd